Home / National / চেরি টমেটোর দেশি জাত উদ্ভাবন

চেরি টমেটোর দেশি জাত উদ্ভাবন

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষনা) এ কে এম আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫ নামে তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে এই চেরি টমেটো। তার উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর জাত চারটি সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন পেয়েছে।

অধ্যাপক এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫। আমাদের দেশে ভোক্তা ও চাষি পর্যায়ে চেরি টমেটোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । এদের প্রায় বেশির ভাগই বিদেশি কোনো জাতকে দেশি আবহাওয়ার উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে।

এই জাতগুলোই দেশে প্রথম বিদেশি জাতের চেরি টমেটোর সাথে দেশীয় টমেটোর সংকরায়ন এবং পরবর্তী সময়ে পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসাবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় স্বাদকে অক্ষুন্ন রেখে চেরি সাইজ আনতে গবেষককে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭-৮ বছর। বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশি আবহাওয়ায় দেশি টমেটোর মতোই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষণীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজ বিহীন এবং পুষ্টিকর। গাছ প্রতি ফলন ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ কেজি। এছাড়াও সুপার শপগুলোতে যে বিদেশি বীজ বিহীন বা কম বীজযুক্ত চেরি টমেটো পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই প্রায় এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে এই জাতগুলো আমাদের জন্য হতে পারে বিদেশি জাতগুলোর পরিপূরক।

তাছাড়া, যে কোনো সবজির মধ্যে রান্নার পর টমেটোর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী সবচেয়ে বেশি অক্ষুন্ন থাকে। আর নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর রান্না ছাড়াই পাকা অবস্থায় আঙ্গুরের মতো খাওয়া যায় বিধায় এবং এদের এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী বেশি থাকায় মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে গবেষক প্রফেসর আমিনুল ইসলাম মনে করেন। তাছাড়া টমেটোতে বেশি পরিমাণে লাইকোপিন থাকায় ত্বকের যত্নে চেরি টমেটো খুবই উপকারী। গাছের ক্যানোপি কম হওয়ায় ছাদ বাগানেও এ জাতগুলো সহজেই উৎপাদন করা যাবে।

এই জাতগুলোর একজন সহযোগী ব্রিডার হিসেবে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা মোস্তফা ইরা বলেন, তার গবেষণা বরাবরই ভিন্ন ধর্মী থাকায় ছাত্র অবস্থায়ই এই চেরি টমেটো নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হই এবং পরবর্তী সময়ে এর উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকি। দেশের মানুষের উৎপাদন ও খাদ্য চাহিদায় এটি কৃষকের এবং ভোক্তার প্রথম পছন্দ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিচে জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো: বিউ চেরি টমেটো ২: গাছ কিছুটা লম্বা হয়, এ টমেটো দেখতে অনেকটা নারকেলি বরই’র মতো, দুই মাথা কিছুটা চোখা আকৃতির, প্রতি গুচ্ছে ১৫-২০টি টমেটো ধরে। প্রতিটির ওজন হয় ২০-২২ গ্রাম। প্রতি গাছে ১৮০-২০০টি টমেটো ধরে এবং ফলন হয় ২ থেকে ৩ কেজি।

বিউ চেরি টমেটো ৩: গাছ কিছুটা লম্বা হয়। এর ফল ছোট, মাথা অনেকটা গোলাকৃতির, তবে ফলের নিচের দিকে ছোট বোটার মতো অংশ থাকে। প্রতি গুচ্ছে ১০-১২টি টমেটো ধরে। প্রতিটির ওজন হয় ১০-১২ গ্রাম। প্রতিগাছে ২০০-২২০টি টমেটো ধরে এবং ফলন হয় দুই থেকে আড়াই কেজি।

বিউ চেরি টমেটো ৪: গাছ লম্বা এবং কম ঝোপড়া। ফল কিছুটা লম্বা ও এক মাথা কিছু চোখা, প্রতি গুচ্ছে ১২-১৫টি ফল ধরে। প্রতি ফলের ওজন ১৮-২০ গ্রাম। প্রতিগাছে ২০০-২৫০টি ফল ধরে, ফলন হয় আড়াই থেকে তিন কেজি। বিউ চেরি টমেটো ৫: গাছ লম্বা ও ঝোপড়া হয়। ফল গোলাকার, প্রতি গুচ্ছে ২০-২৫টি টমেটো ধরে। প্রতিটির ওজন ১২-১৪ গ্রাম। প্রতি গাছে ৩০০-৩৫০ টমেটো ধরে এবং ফলন হয় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কেজি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, এ গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিকভাবে নানা শষ্যের জাত উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন। তিনি এবার উচ্চ মূল্যের চেরি টমেটোর চারটি জাত যোগ করলেন। জাতগুলোর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদন কিংবা ছাদ বাগান, উভয়ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দেশি আবহাওয়া উপযোগী করে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা চেরি টমেটো চাষ করে বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।

About admin

Check Also

আঙিনায় সবজি চাষে বছরে আড়াই লাখ টাকা আয়

হাওর এলাকার উর্বর মাটি সবজি চাষের জন্য খুব উপযোগী। বর্ষার পানি সরতে কিছুটা বিলম্ব হলেও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *