Home / National / পাহাড়ে কাঁঠালের ফলন ভালো, দামও বেশি

পাহাড়ে কাঁঠালের ফলন ভালো, দামও বেশি

চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছে গাছে পাকা কাঁঠাল, ঘ্রাণে মন মাতোয়ারা। হাট-বাজারে পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে জাতীয় এ ফলটি। এবারও পাহাড় ও হাওর অধ্যুষিত হবিগঞ্জ জেলায় কাঁঠালের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। দামও ভালো। এতে খুশি চাষিরা।
পাহাড়ি টিলা আর সমতলে চাষ হওয়া পুষ্টিগুণে ভরা কাঁঠাল বিক্রির জন্য বাগানের মালিকরা পাইকারি বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন কাঁঠাল বেচা-কেনার সঠিক সময়। বিভিন্ন স্থান থেকে সুস্বাদু কাঁঠাল কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন ফলের বাজারে।

স্থানীরা জানান, এ জেলার পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অনেক কাঁঠাল গাছের বাগান। শুধু তাই নয়, বাড়ির আঙ্গিনা আর রাস্তার পাশেও দেখা যায় কাঁঠাল গাছের ছড়াছড়ি। জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল সংগ্রহ করে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাহুবল উপজেলার মুছাই ও চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়ার বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ৎ। আড়তে প্রতিটি কাঁঠাল ৫০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা করে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ছোট আকারের কাঁঠাল প্রতি শ’ বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে সাড়ে ৭ হাজার ও বড় কাঁঠাল প্রতি শ’ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে। পাইকাররা এ কাঁঠাল মুছাই ও চন্ডিছড়া থেকে ট্রাক ভর্তি করে জেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা-সিলেটসহ দেশের নানা স্থানে নিয়ে যান।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে কাঁঠালের ফলন হয়েছে। প্রতি একরে উৎপাদনের পরিমাণ ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন। মুছাইর ফলের আড়তের মালিকরা জানান, এবছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। এতে বাগান মালিকদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। চুনারুঘাটের কালেঙ্গার পাহাড়ের বিনয় দেববর্মা, নবীগঞ্জের দিনারপুরের কাজল মিয়া, বাহুবলের রশিদপুরের তোরাব আলী মোল্লা, তাহির মিয়া, নূরুল ইসলাম জানান, কাঁঠাল উৎপাদন করতে আলাদা কোনো যত্ন নিতে হয় না বলে উৎপাদন খরচও কম। এবছরও কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো হওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘বিষমুক্ত তাজা কাঁঠাল কেনার জন্য মুছাই ও চন্ডিছড়া যেতে হবে। এ বাজারে পাহাড়ি কাঁঠাল পাওয়া যায়। প্রতিদিন ক্রেতাদের মুছাই ও চন্ডিছড়ার কাঁঠাল বাজার বিচরণ হচ্ছে। আমিও ২০০ টাকা দিয়ে একটি কাঁঠাল কিনেছি। খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।’ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘সাতছড়ি হতে ফেরার পথে চন্ডিছড়া থেকে কয়েকটি কাঁঠাল ক্রয় করেছি সবাই মিলে খাওয়ার জন্য।’ সমাজসেবক রনি ইসলাম বলেন, ‘বিষমুক্ত কাঁঠাল কিনতে চন্ডিছড়ায় গিয়েছিলাম। এখানকার কাঁঠালের স্বাদ বেশি।’

হবিগঞ্জের সন্তান সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘সব স্তরের লোকজনের কাছেই কাঁঠাল অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে এই সময়ে গ্রামের দরিদ্র লোকজনের প্রধান খাদ্য তালিকায় চলে আসে কাঁঠাল। বাজার থেকে কাঁঠাল এনে পরিবারের সবাই মিলে একবেলা আহারের পরিবর্তে পেট ভরে কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। কাঁঠালের বীজ শুকিয়ে রেখে দেন বাড়িতে। পরবর্তী সময়ে এই বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ তাও ব্যবহার করা হয় গো-খাদ্য হিসেবে। অর্থাৎ একটি কাঁঠালের বহুমুখী উপযোগ ভোগ করেন তারা। দরিদ্রদের পাশাপাশি ধনী লোকজনের পাতেও এই কাঁঠালের সমাদর রয়েছে।’

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সরকারিভাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর কাঁঠাল ফলের ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশিক্ষণের। কাঁঠাল উৎপাদন করলে একই সাথে ফল এবং কাঠ পাওয়া যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায় বলে অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি লাভজনক। এছাড়াও তেমন যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তবে বন্যা মুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত। কারণ দীর্ঘ দিন এই গাছ পানি সহ্য করতে পারে না।’

হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলিছুর রহমান উজ্জল বলেন, ‘ফলের রাজা আম হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর সব ফলের রাজা কিন্তু কাঁঠাল। এটি একটি সুস্বাদু রসালো ফল। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এ ফল। এগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে। শুধু দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখতে নয়, বরং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও সাহায্য করে কাঁঠাল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।’

About admin

Check Also

আঙিনায় সবজি চাষে বছরে আড়াই লাখ টাকা আয়

হাওর এলাকার উর্বর মাটি সবজি চাষের জন্য খুব উপযোগী। বর্ষার পানি সরতে কিছুটা বিলম্ব হলেও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *