পার্বত্য এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী একটি বস্ত্রের নাম বুরগি (কাঁথা বা কম্বল)। কাঁথা হাতে সেলাই করা হয় আর বুরগি বোনা হয় কোমর তাঁতে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নারীরা আদিকাল হতে এই বুরগি তৈরি করে আসছে। বুরগি তৈরির মূল সরঞ্জাম হলো কার্পাস সুতা আর বাঁশের তৈরি জিনিস। যেমন- বহাদি, সুচ্চেক বাঁশ, তাগলক, সিয়েঙ, বিয়োঙ, হুদুক হাদাক ইত্যাদি। বাঁশের তৈরি এই সরঞ্জামগুলোকে চাকমা ভাষায় ‘সঝপদর’ বলা হয়।
বুরগি কটন, উল, মাসলাইস আর মখমল সুতায় তৈরি করা হয়। ফলে এই বুরগি সব ঋতুতেই ব্যবহারের উপযোগী একটি বস্ত্র হিসেবে পরিচিত। কোমর তাঁতে বোনা হয় বিধায় এটি খুব টেকসই হয়ে থাকে। বুরগি লম্বায় প্রায় সাড়ে ৫ হাত আর বহর ৪ হাত হয়ে থাকে। একটি বুরগি তৈরি করতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এই বুরগির স্থায়িত্ব ৭ থেকে ৮ বছর। বুরগি থেকে কোনো প্রকার পশম বের হয় না। তাই কারোর এজমার সমস্যা থাকলেও তারা অনায়াসে এই বুরগি ব্যবহার করতে পারেন।
আগেকার সময়ে এই বুরগির প্রচলন থাকলেও, বর্তমান সময়ে বিদেশী কম্বলের ভীড়ে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই এখন আর আগের মতো ঘরে ঘরে বুরগি বুনন দেখা যায় না। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে এই পণ্যের প্রচার আর প্রসার দুটোই খুব জরুরি। লেখক : স্বত্ত্বাধিকারী, এসএস এগ্রো প্রোডাক্ট